#চাঁদার টাকায় কেনা হচ্ছে অস্ত্র, চলছে সদস্য প্রশিক্ষণ
#ভারতের অভ্যন্তরে ৬টি ক্যাম্প রয়েছে ইউপিডিএফের
#ভারতে বসেই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রসীত বিকাশ খিসা)
সবুজ চাদরে ঢাকা শান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম মাঝেমধ্যেই অশান্ত হয়ে ওঠে। বিভেদ আর অবিশ্বাসের ঘেরাটোপে পড়ে প্রায়ই সংঘর্ষ, হানাহানিতে জড়িয়ে পড়েন বাঙালি আর পাহাড়িরা। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার অশান্ত হয়েছে পাহাড়, ঝড়েছে রক্ত।
সরবশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির গুইমারা এলাকায় ডাকা অবরোধে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ, সেনাসদস্যসহ অনেকেই।
এ ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করছে প্রশাসন।
প্রশাসন বলছে, পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পরোক্ষ সহযোগিতায় তিন পার্বত্য জেলাকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করছে ইউপিডিএফ। তাদের মূল শক্তি হচ্ছে চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে শক্তি খর্ব হবে তাদের।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাতিল করে সেনাবাহিনীকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিলে পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি ফিরবে। আর চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে শক্তি খর্ব হবে ইউপিডিএফের।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় চাঁদাবাজির মাধ্যমে বছরে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করে ইউপিডিএফ। চাঁদাবাজির টাকায় অস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি দলের সশস্ত্র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। খাগড়াছড়ির সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের অভ্যন্তরে ইউপিডিএফের ছয়টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে।
৪৫০ জনের মতো সশস্ত্র প্রশিক্ষিত সদস্য রয়েছে সংগঠনটির। তারা চার কোম্পানিতে বিভক্ত হয়ে পাহাড়জুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। চাঁদাবাজির শিকার বেশিরভাগ সাধারণ বাঙালি ও পাহাড়ি। আর ভারতে বসেই তিন পার্বত্য অঞ্চলে ইউপিডিএফকে নিয়ন্ত্রণ করেন দলের প্রধান প্রসীত বিকাশ খিসা।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবানে বছরে ৩৫০ কোটি টাকার মতো চাঁদাবাজি করে ইউপিডিএফ। অনেকক্ষেত্রে রসিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করে। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, বার্ষিক কিংবা এককালীন চাঁদা আদায় করে ইউপিডিএফ।
সাধারণ মানুষ, বাজার, রিসোর্ট মালিক, ব্যবসায়ী, যানবাহন, সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদার বাদেও অপহরণ করে মুক্তিপণের মাধ্যমেও চাঁদা আদায় করা হয়।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, রাঙামাটিতে বছরে ২৪১ কোটি, খাগড়াছড়িতে ৮৬ কোটি এবং বান্দরবানে ২১ কোটি টাকার মতো চাঁদাবাজি করে ইউপিডিএফ। সবচেয়ে বেশি চাঁদা আদায় করে সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাছ থেকে। বিগত ১৬ বছরে তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের দ্বারা ২৭৮ বারেরমতো অপহরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৩২ জন অপহরণের শিকার হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাগড়াছড়িতে সরকারি প্রকল্পের কাজ করা এক ঠিকাদার বলেন, ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বেশি চাঁদাদাবির কারণে আমার প্রকল্পের কাজ অনেকদিন বন্ধ রেখেছি। পরে বাধ্য হয়ে চাঁদা দিয়ে সমঝোতা করে কাজ উঠিয়ে এনেছি। ইউপিডিএফের লোকজন অস্ত্র দেখিয়ে এ চাঁদা আদায় করে।’
‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানো একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে পাহাড়কে অশান্ত করার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ। এ ব্যাপারে সব প্রমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে রয়েছে। ভিডিও রয়েছে। সব ধরনের অপপ্রচার ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে পার্বত্য এলাকাকে রক্ষায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ, কমান্ডার, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন
সাজেক এলাকার একজন রিসোর্ট ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউপিডিএফকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এখানে ব্যবসা করি। এখানে ইউপিডিএফের চাঁদাবাজিটা ওপেনসিক্রেট। সাজেকের আশপাশে অনেক গহিন এলাকা আছে যেখানে সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য কোনো সরকারি সংস্থার লোক যেতে পারেন না। এসব জায়গাজুড়ে ইউপিডিএফের ঘাঁটি রয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি জানলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে।’
বিগত ১৬ বছরে তিন পার্বত্য জেলায় ইউপিডিএফ এবং জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হন। এরমধ্যে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৮৯ বার আঞ্চলিক হত্যাকাণ্ডে উভয়পক্ষের মোট ১২৪ জন নিহত ও ৪২ জন আহত হন।
একই সময়ে ২৯৬ বার গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে ২৮ জন নিহত হন। একই সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৬ বার গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে ১৪ জন সেনাসদস্যসহ ২১ জন আহত হন। নিহত হন ১৬ জন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসংলগ্ন ভারতের অভ্যন্তরে ছয়টি ক্যাম্প রয়েছে ইউপিডিএফের। এরমধ্যে পাঁচটি রয়েছে ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলায়। এছাড়া খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি ও দীঘিনালা সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে রতন নগর, টুইচামা, নারায়ণপুর, পঞ্চ রতন, নারিকেল বাগান ও পূর্ব সাবরুম ক্যাম্প।
এসব ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষিত সদস্যরা দীঘিনালা থেকে সাজেক, মহালছড়ি থেকে কাউখালী, লক্ষ্মীছড়ি থেকে রামগড়, খাগড়াছড়ি থেকে মাটিরাঙ্গা পর্যন্ত ইউপিডিএফের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
তাদের সামরিক শাখায় সশস্ত্র কার্যক্রমের জন্য রয়েছে এলাকাভিত্তিক চারটি বিশেষ কোম্পানি। স্পেশাল-ফুয়াইত কোম্পানি, ফ্যান্টম-হাইল্যান্ডস ড্রাগন কোম্পানি, রেঞ্জার-জাগুয়ার কোম্পানি এবং পাইওনিয়ার কোম্পানি।
‘ইউপিডিএফের কার্যক্রম পুরোপুরিই চাঁদাবাজিনির্ভর। চাঁদার টাকায় তারা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের যে সামরিক শক্তি রয়েছে, তাতে আমাদের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর কাছে কিছুই না। মূলত তারা (ইউপিডিএফ) ভারতের ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে যুক্ত।’ -অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির
ইউপিডিএফের বর্তমান সামরিক প্রধান হলেন উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা। সংগঠনের অন্যদের মধ্যে রয়েছেন অর্থ সম্পাদক অর্কিড চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক সচিব চাকমা, সাধারণ সম্পাদক রবি সংকর চাকমা এবং সভাপতি প্রসীত বিকাশ খীসা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসিরের। ২০১১ সালে তিনি অবসরে যান। ১৯৯৩-৯৪ সালে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা রিজিয়নে পদায়িত ছিলেন তিনি।
ইউপিডিএফের কার্যক্রমের বিষয়ে হাসান নাসির বলেন, ‘ইউপিডিএফের কার্যক্রম পুরোপুরিই চাঁদাবাজিনির্ভর। চাঁদার টাকায় তারা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের যে সামরিক শক্তি রয়েছে, তাতে আমাদের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর কাছে কিছুই না। মূলত তারা (ইউপিডিএফ) ভারতের ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে যুক্ত।’
হাসান নাসির আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তীসময়ে সব দিকে ফেল করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইউপিডিএফকে দিয়ে লাস্ট কার্ডটা খেলে দিয়েছে ভারত। এতদিন তারা (ভারত) ইউপিডিএফকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। মূলত ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বের করে দিয়ে ইউপিডিএফকে শক্তিশালী করেছে।’
পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে জানিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান নাসির বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তিটি বাতিল করে পাহাড়ে সেনাবাহিনীকে আগের নেতৃত্বে ফিরিয়ে নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসিকে দায়িত্ব দিতে হবে।
পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের হুমকি থেকে রক্ষা করতে হলে পাহাড়ে বাঙালি উপস্থিতি বাড়াতে হবে। সেনাক্যাম্পগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সব সরকারি প্রকল্পে বাঙালিদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সংগঠনের সশস্ত্র সদস্যদের ধরে মূলোৎপাটন করতে হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘খাগড়াছড়ির সীমান্তের অনেক পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী বাদে অন্য বাহিনীগুলো যেতে পারেন না। বিশেষ করে সাজেক, লক্ষ্মীছড়ির আশপাশের নির্জন পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ইউপিডিএফের ঘাঁটি রয়েছে। তারা সীমান্ত দিয়ে অবাধে ভারতে যাওয়া-আসা করে। ত্রিপুরায় জায়গা-জমি, বাড়িঘর রয়েছে ইউপিডিএফ নেতাদের। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়গুলো আলোচনা হয়।
মাঝেমধ্যে সে দেশের পুলিশের হাতে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অস্ত্রসহ আটক হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।’ উদাহরণ টেনে ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের অরুন্ধতীনগরে ইউপিডিএফের সশস্ত্র কমান্ডার সমাজপ্রিয় চাকমা, অরুণাচল প্রদেশে একে-৪৭ রাইফেলসহ ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্য রাজু চাকমা আটক হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ আয়ের কোনো উৎস নেই। তারা পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজি করে নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। চাঁদাবাজির টাকায় অস্ত্র সংগ্রহ করে। ইউপিডিএফ সদস্যরা সাধারণ পাহাড়িদের সঙ্গে মিশে থাকে, যে কারণে তাদের শনাক্ত করা কিছুটা কষ্টসাধ্য। পাহাড়ে আমাদের শক্ত গোয়েন্দা জাল রয়েছে। এরমধ্যে অনেক অভিযানে অসংখ্য অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।’
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে নিয়মিত চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ জানাতে আসে না। যে কারণে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকে। অনেক ঘটনায় মামলা হয়, অনেকে গ্রেফতারও হয়। বেশকিছু মামলায় অনেকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিষয়গুলো নিয়ে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কালাম রানা গণমাধ্যমকে বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসী যেসব সংগঠন রয়েছে, বিশেষ করে ইউপিডিএফ পার্বত্য এলাকাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। গুইমারা এলাকায় সব ধরনের সশস্ত্র কার্যকলাপ এবং পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির পেছনে যারাই দায়ী সবসময় তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়।
অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানো একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে পাহাড়কে অশান্ত করার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ। এ ব্যাপারে সব প্রমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে রয়েছে। ভিডিও রয়েছে। সব ধরনের অপপ্রচার ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে পার্বত্য এলাকাকে রক্ষায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য দ্বৈতনীতি চলছে। একটি ধর্ষণের ঘটনায় জুম্ম ছাত্র-জনতা যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল আমরা তাতে সমর্থন দিয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনার আড়ালে তিনজনকে হত্যা করে ঘটনার দায় ইউপিডিএফের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
চাঁদাবাজির বিষয়ে অংগ্য মারমা বলেন, ‘চাঁদাবাজি কিংবা ভারতে ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ঘটনা সত্যি নয়। তবে দল চালাতে টাকা লাগে।
আমরা আমাদের শুভার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দল চালাই। দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও পার্টির লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করে। তাহলে তাদেরগুলোকেও চাঁদাবাজি বলতে হবে।’
অংগ্য মারমা বলেন, পার্বত্য এলাকায় ধর্ষণের ঘটনার মেডিকেল রিপোর্ট কখনো পজিটিভ আসে না। এটি অলিখিত নির্দেশনা। পাহাড়ে ধর্ষণের ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্ট পজিটিভ দেওয়ার জন্য আমরা আগে থেকেই বলে আসছি।’
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির গুইমারায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে এক মারমা কিশোরী নিখোঁজ হয়। ওইদিন রাত ১১টার দিকে একটি ক্ষেত থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা।
ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে-এমন অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে জুম্ম-ছাত্র জনতার ব্যানারে গত শনিবার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচি কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
এরমধ্যে গত রোববার গুইমারার রামসু বাজারে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।